আয়ারল্যান্ডও চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে

গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে রোমাঞ্চকর একটা গল্প শোনা গেছে ক্রিকেটপাড়ায়। আড়াই দিনে টেস্ট জয়ের অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের খেলা শেষে যে চিত্র পাওয়া গেল, তাতে করে টেস্ট ম্যাচটি একপেশে নাও হতে পারে। বরং অচেনা আয়ারল্যান্ডের কাছ থেকে কিছুটা প্রতিরোধের মুখে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই। 

গতকাল প্রথম ঘণ্টায় যেমন প্রেস বক্সের সাংবাদিকদের ভুল ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছেন সফরকারীরা। সবার ধারণা ছিল, প্রথম সেশনেই ছয়-সাত উইকেট হারিয়ে খুব কম রানে অলআউট হবে আয়ারল্যান্ড। সেই দলই কিনা স্বাগতিক পেসার ত্রয়ীকে দারুণভাবে মোকাবিলা করে গেছে। শেষ বিকেলে অলআউট হওয়ার আগে ২১৪ রান করে আইরিশরা বুঝিয়ে দেয় মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামলেও লাল বলের খেলার মেজাজটা তাদের সহজাত। শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোর সুবিধা কাজে লাগাতে পারাও পেশাদার ক্রিকেট দলের ‘একটি আর্ট’। শিক্ষানবীন আইরিশরা সেখানেও দেখাল পারদর্শিতা। ১০ ওভারে ৩৪ রানে বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে আউট করা সেই শিল্পের প্রকাশ।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সব ম্যাচের জন্যই স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সিলেট এবং চট্টগ্রামে ভালো উইকেটেই খেলা হয়েছে। মিরপুরের কিউরেটর গামিনী ডি সিলভাও স্পোর্টিং উইকেট দিতে পেরেছেনে টেস্টের জন্য। ব্যাটার এবং বোলার সবার জন্যই সমান সুবিধা থাকা উইকেট যাকে বলে। দিনের শেষের রোমাঞ্চ সেটাই প্রমাণ করে। ছয় ঘণ্টার তিন সেশনে ১২টি উইকেট পতন হলো। অচেনা কন্ডিশনে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া ছিল আয়ারল্যান্ডের নিরাপদ সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ নিরাপদ থাকেনি। বাংলাদেশের তিন পেসার পালাক্রমে বোলিং করে চাপে ফেলে দেন সফরকারী ব্যাটারদের। বাঁহাতি পেসার প্রথম ব্রেক থ্রু দেন দলের ১১ রানে মারি কামিন্সকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। ২৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট শিকার। এবাদতের প্রথম সেলুট দেখেন দর্শক। অধিনায়ক তাইজুল ইসলামের হাতে বল তুলে দেন একাদশ ওভারে। ইনিংসের ২২তম ওভারে তাইজুল প্রথম উইকেট নেন। এরপর আইরিশরা ছোট ছোট জুটি গড়ে রান সংগ্রহ করতে থাকে। তাইজুলও পালা করে উইকেট নিতে থাকেন। অভিষেকেই ৫০ রান করেন হ্যারি টেকটর। এদিন চোখে পড়ার মতো দৃশ্য ছিল ৬৫ ওভার পর্যন্ত সাকিবের ব্যাটিংয়ে না আসা। ৬৬তম ওভারে গিয়ে বল হাতে নেন অধিনায়ক। পুরো ইনিংসে মাত্র তিন ওভার বোলিং করেন সাকিব। টেস্ট পরিবারের নবাগত সদস্য আয়ারল্যান্ডকে ২১৪ রানে বেঁধে ফেলে জবাব দিতে নেমেই বিপদে পড়ে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ওপেনিং জুটি ভাঙে মাত্র দুই রানে। অফস্টাম্পের বাইরে করা মার্ক আদেয়ারের বাউন্সার বল ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন নাজমুল হোসেন শান্ত। অথচ চাইলেই অনায়াসে বলটি ছেড়ে দিতে পারতেন বাঁহাতি এ ওপেনার। ফিল্ডিংয়ের সময় ক্যাচ নিতে গিয়ে চোট পাওয়া তামিম ইকবাল আউট হলেন ২১ রানে।

এই ম্যাচের আগে মাত্র তিন টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা আয়ারল্যান্ডের। চার বছরে চতুর্থ টেস্ট খেলছে দলটি। যে ম্যাচে অভিষেক হয়েছে ছয়জন ক্রিকেটারের। সেই দলের বিপক্ষে স্পোর্টিং কন্ডিশন পেয়ে তিন পেসার নিয়ে নামে বাংলাদেশ। ৯ বছর পর দেশের মাটিতে তিন পেসার নিয়ে টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। চন্ডিকার এবারের কোচিং দর্শন ভিন্ন। ক্রিকেটারদের সব সংস্করণেই আক্রমণাত্মক কৌশল দিচ্ছেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়েই সেটা কার্যকর করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

Logo

© 2023 Dinkal24 All Rights Reserved.