রাইসুল ইসলাম আসাদ
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩২ পিএম
শুধু বন্ধু বলে নয়, হুমায়ুন ফরীদি এমন একজন শিল্পী, যাঁকে নিয়ে আসলে বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। কথার মধ্য দিয়েও প্রকাশ করা কঠিন তিনি কত বড় মাপের শিল্পী। ফরীদি আসলে ধীরে ধীরে শিল্পী হয়ে ওঠেননি, শিল্পী হয়েই জন্মেছিলেন। আমাদের যাঁদের বলি শিল্পী হওয়ার জন্য জন্ম হয়েছে, হুমায়ুন ফরীদি তাঁদেরই একজন। যখন মঞ্চে কিংবা ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেন, দেখিয়ে দিতেন একটা সাধারণ জিনিস কীভাবে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তোলা যায়। একটা সময় ছিল, যখন টিভি নাটক মানেই ফরীদি। টেলিভিশনের মতো সিনেমায় অভিনয় করেও তৈরি করেছিলেন অগণিত ভক্ত-অনুরাগী। যদিও সিনেমায় যাওয়া নিয়ে তাঁর মনে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছিল। তার পরও চলচ্চিত্র জগতে পা না রেখে পারেননি। এটা আশির দশকের মাঝামাঝির কথা। যখন ফরীদি অনুধাবন করেন তিনি আসলে অভিনয় ছাড়া আর কিছু করতে পারবেন না। অন্য কিছু থেকে রোজগার করে জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়। তাঁর একমাত্র অবলম্বন কিংবা পুঁজি হচ্ছে অভিনয়। তাই ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করেন সিনেমায় অভিনয় যাত্রা।
ফরীদি আমাকে বলেছিলেন, 'সিনেমায় অভিনয় নিয়ে আমাকে যে যাই বলুক, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাব না। কারণ, ওটা না করলে আমার পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন।' তাঁর এই কথা এটা স্পষ্ট ছিল, অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। মঞ্চ বা টেলিভিশনকে আশ্রয় করে টিকে থাকা কতটা কঠিন, সেটাও ফরীদি সহজেই বুঝে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটা জায়গায় অনেকের সঙ্গে ফরীদির পার্থক্য এখানেই, পেশাদারির জায়গায় নিজের শতভাগ তুলে ধরার চেষ্টায় এতটুকু ফাঁকি থাকত না। তাই সিনেমা জগতে গিয়েও এক নতুন আঙ্গিক নিয়ে বড় পর্দায় এসেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। যেজন্য শুধু তাঁকে দেখার জন্যই অগণিত দর্শক হলে ভিড় করতেন। মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র- সব মাধ্যমেই ফরীদি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে পেরেছিলেন। আমার ভালো লাগার বিষয় হলো, অবিস্মরণীয় এই শিল্পীর সঙ্গে ছিল আত্মার সম্পর্ক। তাই অভিনয় জীবনের বাইরেও প্রতিটি বিষয়ে কথা হতো, চলত ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন বুনন। কষ্টের বিষয় হলো, সৃজনশীল এই বন্ধুকে হারিয়ে শুধু স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা।
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
© 2023 Dinkal24 All Rights Reserved.