নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৩, ০৩:২২ পিএম
গত ০৫ মে ২০২৩ তারিখ রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় এলাকায় র্যাবের অভিযানে টেকনাফের দূর্গম পাহাড় কেন্দ্রিক বিভিন্ন সময়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অন্যতম হোতা ১। হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন ওরফে ছলে ডাকাত (৩০) ও তার সহযোগী ২। নুরুল আলম ওরফে নুরু (৪০) ৩। আক্তার কামাল ওরফে সোহেল (৩৭) ৪। নুরুল আলম ওরফে লালু (২৪) ৫। হারুনুর রশিদ (২৩) এবং ৬। রিয়াজ উদ্দিন ওরফে বাপ্পি (১৭)’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে ঘটনাস্থল হতে ০১টি বিদেশী পিস্তল ও ০৫ রাউন্ড গুলি, দেশীয় তৈরী ০৩টি একনলা বড় বন্দুক, ০২টি একনলা মাঝারি বন্দুক, ০৬টি একনলা ছোট বন্দুক সহ মোট ১১টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ০৪ রাউন্ড খালি কার্তুজ, ০২টি ছুরি ও ০৬টি দেশীয় তৈরি দা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে এই চক্রটি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তার এই সন্ত্রাসী দলে সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। সালেহ এর নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলটি টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও নেচারি পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়ন এর নোয়াখালী পাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কচ্ছপিয়া পাহাড়, জাহাজপুরা পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। কখনও অটোরিক্সার চালক এবং কখনও সিএনজি চালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন কৌশলে তারা কক্সবাজারের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শ্যামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফ ইত্যাদি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের টার্গেট করে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ছলের নেতৃত্বে গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রিঃ টেকনাফের বাহারছড়া এলাকা হতে ১০ (দশ) জন কৃষক, ০২ জানুয়ারী ২০২৩ খ্রিঃ রোহিঙ্গা শরনার্থী রেজুয়ানা, ২৬ মার্চ ২০২৩ খ্রিঃ ন্যাচারাল পার্কের দর্শনার্থী হ্নীলার দদমিয়ার বাসিন্দা কবির আহাম্মদের ছেলে রিদুয়ান সবুজ (১৭) ও একই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আবুল কালামের ছেলে নুরুল মোস্তফা (১৬), ১৫ এপ্রিল ২৩ খ্রিঃ ফুলের ডেইল এলাকা থেকে বাবুল মেম্বারের ছেলে ফয়সাল (১৭), ৩০ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিঃ হামিদুল্লাহ (২৪) এবং ০৩ মে ২০২৩ খ্রি: রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৭ ব- ই/৬ এ বসবাসরত আবুল কালামসহ অনেক ব্যক্তিকে অপহরণ করতঃ মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে ছেড়ে দিত। উল্লেখ্য, তারা অপহৃত ব্যক্তি প্রতি ৫-১০ লাখ টাকা ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে কম-বেশি মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ব্যক্তির উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন। প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার কারণে মুক্তিপণের অর্থ প্রদান করে ফেরত আসা অধিকাংশরাই অপহরণকারীদের সম্পর্কে অভিযোগ দিতে বা মুখ খুলতে ভয় পেত। অদ্যাবদি এ সন্ত্রাসী দল কর্তৃক প্রায় অর্ধ-শতাধিক অপহৃত হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ২০১২ সালে সে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যায় এবং তৎকালীন সময়ে পাশ্ববর্তী দেশ সমূহের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজসে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে এবং অবৈধভাবে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করে এবং অবৈধভাবে পাশ্ববর্তী দেশে যাতায়াত ও অপরাধমূলক কার্যক্রম করতে থাকে। এ সময় অপহরণ-ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম করে আসছিল ছালেহ উদ্দিন। ছালেহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠনের জন্য ১২/১৫ জন সদস্য নিয়ে ছালে বাহিনী গঠন করে। সে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে অপহরণ, ডাকাতি, ও মাদক চোরাচালান কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড সহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে মানবপাচার করত বলে জানা যায়। হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাতের নামে একাধিক মামলা থাকায় সে আত্মগোপন থাকে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আক্তার কামাল ওরফে সোহেল গ্রেফতারকৃত ছালেহ উদ্দিন এর অন্যতম সহযোগী। সে অপহরণের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য গ্রেফতারকৃত ছালেহ’র নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করত। এছাড়াও মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় ১০ এর অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। সে অস্ত্রসহ মহড়া ও আতংক সৃষ্টি করত বলে জানা যায়। সে ইতিপূর্বে বিভিন্ন অপরাধে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়।
এছাড়া হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ উদ্দিন এর আরেক সহযোগী নুরুল আলম ওরফে নুরু বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ০৬ এর অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। সে এলাকা আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাদি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করত বলে জানা যায়। নুরুল আলম ওরফে নুরু ইতিপূর্বে কারাভোগ করে বলে জানা যায়।
নুরুল আলম ওরফে লালু (২৪) ছালেহ ডাকাতের অপরাধ কর্মকান্ডের অন্যতম সহযোগী এবং বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাদি, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় একের অধিক মামলা রয়েছে এবং একাধিকবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়।
ছালেহ এর নেতৃত্বে তার অন্যান্য সহযোগী হারুনুর রশিদ (২৩) এবং রিয়াজ উদ্দিন ওরফে বাপ্পি (১৭) বিভিন্ন উপায়ে চাঁদা সংগ্রহ, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের কাজে সহায়তা সহ অস্ত্র দেখিয়ে মানুষের মনে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন রকম অপরাধমূক কর্মকান্ড সংগঠিত করে। মূলত তাদের লক্ষ্য ছিল, অপহরণের পর অপহৃত ভিকটিমদের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করা এবং তাদের পরিবারের নিকট হতে মুক্তিপণ আদায় করা।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ছালেহ উদ্দিন ওরফে ছালে ডাকাতের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
© 2023 Dinkal24 All Rights Reserved.