বদলে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্য

সৌদি আরবের তৎকালীন ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধান শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৮ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে নিয়ে চরম উপহাস করেছিলেন। সে সময় একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন, খামেনির চেয়ে বরং ‘হিটলারই ভালো’। কারণ, জার্মানির নাৎসি বাহিনীর প্রধান অ্যাডলফ হিটলার ইউরোপ জয় করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু খামেনি গোটা পৃথিবীই জয় করতে চান। এমন বৈরিতা থাকলেও সম্প্রতি এ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অভূতপূর্ব উন্নতি দেখেছে বিশ্ব। চীনের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চুক্তিতে সম্মত হয় দুই দেশ। এ চুক্তির ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই আসলে বদলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পরোক্ষ দ্বন্দ্বে জড়ানোর পর সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে চিড় ধরে ২০১৬ সালে। বিষয়টি চীনের জন্য একটি নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বেইজিং চায়, মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে। সেই সুযোগটিই লুফে নিতে দেশটি রিয়াদ ও তেহরানকে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে সফল হয়।
এ চুক্তি ইরানের জন্য বড় স্বস্তির বিষয়। কারণ, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ছাড়াও কঠোর নিষেধাজ্ঞায় পড়ে আছে দেশটির অর্থনীতি। বড় সুবিধা পাবে সৌদি আরবও। চুক্তিটি আঞ্চলিক উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে।  

পরোক্ষভাবে দ্বন্দ্বে জড়ানোর ফলে সৌদি সরকারের বাজেট নষ্ট হওয়া ছাড়াও সুনাম ক্ষুণ্ন এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়েছে। এই পরিস্থিতির উত্তরণে বিরোধের সমাধান করাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান।  

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান টুইটারে বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর ভাগ্য এক। তাই সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার জন্য একসঙ্গে কাজ করা জরুরি।

চীনের মধ্যস্থতায় পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি অনেক বিশ্লেষকের কাছেই বিস্ময়কর। চুক্তিতে চীনা সম্পৃক্ততায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্য কমানোর বিষয়টি সামনে আনছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু অন্য বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, রিয়াদের মূল্যায়ন হলো, ওয়াশিংটন কোনোভাবেই সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে চুক্তির মধ্যস্থতা করতে পারত না। কারণ, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা চরমে।

ওয়াশিংটনের একটি গবেষণা গ্রুপের বিশ্লেষক ইয়াসমিন ফারুক বলেছেন, সৌদি আরব কয়েক বছর ধরেই বুঝেছে তাঁদের সম্পর্কের বৈচিত্র্য বজায় রাখতে হবে। তবে চীনা নিরাপত্তা গ্যারান্টিরও যে সীমাবদ্ধতা আছে, তা রিয়াদের কাছে পরিষ্কার।

সংঘাতে জড়িয়ে থাকলে ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে এই চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছে সৌদি আরব। তবে চুক্তির মানে এই নয় যে, রিয়াদ শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে তার প্রধান নিরাপত্তা গ্যারান্টরের জায়গা থেকে বাদ দিচ্ছে। এখনও যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় অংশই সরবরাহ করছে। তার পরও অঞ্চলটিতে মার্কিন আধিপত্যের আপেক্ষিক দুর্বলতা দৃশ্যমান হচ্ছে। কারণ, সৌদি কর্মকর্তারা চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত এবং এর বাইরেও সম্পর্ক প্রসারিত করেছে।

ইরানের সঙ্গে নতুন এই চুক্তির প্রথম ও প্রধান পরীক্ষা হবে ইয়েমেনে। যেখানে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সৌদি আরব সংঘাতের অবসান ঘটাতে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। এ লড়াইয়ে বহু মানুষের প্রাণহানি ও দরিদ্র দেশটিকে মানবিক বিপর্যয়ে ফেলেছে।

মন্তব্য করুন

Logo

© 2023 Dinkal24 All Rights Reserved.